দুদিন ধরে সারা দেশেই ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাবে দেশের নদ-নদীতে বেড়েছে পানি, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জায়গায় অতিক্রম করেছে বিপদসীমা। প্লাবিত হয়েছে উপকূলীয় এলাকার নিম্নাঞ্চল। এ প্রবণতা আরো তিনদিন অব্যাহত থাকতে পারে এবং অন্তত ছয় জেলায় বন্যা হতে পারে বলে জানিয়েছে পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র শুক্রবার সবশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, তিন দিন ফেনী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোণায় বন্যার ঝুঁকি রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের কাজী জেবুন নেসা সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমার দেশকে বলেন, নিম্নচাপ আকারে স্থলভাগে সাতক্ষীরা ও আশপাশে অবস্থান করা নিম্নচাপটি উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে সরে গিয়ে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে টাঙ্গাইল ও এর আশপাশে অবস্থান করছিল। এটি আরো উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে সরে গিয়ে সারাদিন বৃষ্টি ঝরিয়ে দুর্বল হয়ে সন্ধ্যার দিকে বাংলাদেশের উপরিভাগ থেকে ধীরে ধীরে ভারতের মেঘালয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, রাত ৯টা কিংবা আরো পরে এটি পুরোপুরি বাংলাদেশ অতিক্রম করতে পারে।
তিনি জানান, সারা দেশে বিচ্ছিন্নভাবে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। এ অবস্থা শনিবার (আজ) নাগাদ থাকবে। তবে শুক্রবারের চেয়ে শনিবার কিছুটা কমলেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ভারী বৃষ্টি থাকবে।
শুক্রবার অপর বুলেটিনে বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ফেনীর মুহুরী নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চল এবং তিন দিন সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোণার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি রয়েছে। একইভাবে ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী, ফেনী, হালদা, সাঙ্গু, মাতামুহুরী নদীর পানি বাড়তে পারে। এই সময় মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে মাতামুহুরী নদীর পানি। এরপর পানি কমতে পারে।
অন্যদিকে সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বলছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বাড়তে পারে আগামী তিন দিন এবং তিস্তার পানি সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।
২৪ ঘণ্টায় বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীগুলোতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ার আসতে পারে। সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বাড়ছে, এই পরিস্থিতি আগামী তিন দিন অব্যাহত থাকলেও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী দুটির পানি এক দিন স্থিতিশীল থাকলেও পরের চারদিন বাড়তে পারে। তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহের সম্ভাবনা রয়েছে।
গঙ্গা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকলেও বাড়ছে পদ্মার পানি। নদী দুটির পানি পাঁচদিন বাড়লেও বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, শুক্রবার পর্যন্ত ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকায় দেশের উত্তরে রংপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ফেনী জেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।