ইউরোপের পণ্যে ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির হুমকি

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। তবে সেই চুক্তি হতে হবে ‘সম্মানের ভিত্তিতে’, ‘হুমকি’ দিয়ে চুক্তি করা যাবে না, ইইউর বাণিজ্য কমিশনার মারোশ সেফকোভিচ এ কথা বলেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যে শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন। বলেছেন, ইউরোপ থেকে আমদানি হওয়া সব পণ্যে ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইইউর বাণিজ্য কমিশনার মারোশ সেফকোভিচ বলেন, ইইউ এখনো আলোচনায় আছে, উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক, এমন চুক্তি করতে চায় ইইউ।

মারোশ আরও বলেন, ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্কের সঙ্গে তুলনীয় কিছু নেই এবং তা পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতেই পরিচালিত হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে ইইউ নিজের স্বার্থ সংরক্ষণে প্রস্তুত, এ কথাও বলেন তিনি। গত শুক্রবার এক ফোনালাপে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার ও বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লাটনিকের সঙ্গে কথা বলেন সেফকোভিচ।

এর আগে শুক্রবার সকালে ট্রাম্প বলেন, ইইউর সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা এগোচ্ছে না, এ বিষয়ে তিনি অধৈর্য হয়ে পড়েছেন। ফলে আগামী ১ জুন থেকেই বাড়তি শুল্ক কার্যকর হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘আমি কোনো চুক্তির খোঁজে নেই, চুক্তি আমরা ঠিক করে ফেলেছি।’ পরে তিনি ইঙ্গিত দেন, ইউরোপীয় কোনো কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে বড় বিনিয়োগ করলে তিনি কিছুটা ছাড় দিতে পারেন, অর্থাৎ বিলম্ব করতে পারেন। আগে যে কথা তিনি বারবার বলেছেন আবারও সেই কথার পুনরাবৃত্তি করেন, যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য তৈরি বা উৎপাদন করা হলে শুল্ক দিতে হবে না।

মার্কিন সরকারি তথ্যানুসারে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বাণিজ্য অংশীদার। গত বছর তারা যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন বা ৬০ হাজার কোটি ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করেছে; সেখান থেকে আমদানি করেছে ৩৭০ বিলিয়ন বা ৩৭ হাজার কোটি ডলারের পণ্য।

ট্রাম্পের হুমকির কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ইউরোপীয় দেশগুলো। তারা বলেছে, উচ্চ শুল্ক উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন বলেন, ‘এই পথে আমাদের হাঁটার দরকার নেই, আলোচনাই সবচেয়ে টেকসই উপায়।’ ফ্রান্সের বাণিজ্যমন্ত্রী লরাঁ স্যাঁ-মার্টিন বলেন, ‘আমরা উত্তেজনা প্রশমনে আগ্রহী, তবে প্রয়োজন হলে জবাব দিতেও প্রস্তুত।’ জার্মান অর্থমন্ত্রী ক্যাথরিনা রাইখে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমাধানে পৌঁছাতে “আমাদের সবকিছু করা উচিত”।’ ডাচ প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কোফ বলেন, ‘আমরা আগেও দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় শুল্ক কখনো বাড়ে, কখনো কমে। আমরা ইইউর কৌশলের সঙ্গেই আছি।’

এদিকে ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা ও রক্ষণশীল গবেষণাপ্রতিষ্ঠান হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের স্টিফেন মুর বিবিসিকে বলেন, হতে পারে ইউরোপের কিছু দেশকে আলাদা করে আলোচনায় বসতে চাওয়া হবে, যদিও তারা ব্লক হিসেবে আলোচনা করছে। তাঁর মতে, ট্রাম্প আসলে কেবল যুক্তরাষ্ট্র নয়, পুরো বিশ্বকে চীনের প্রভাব থেকে আলাদা করতে চাচ্ছেন।

এপ্রিলের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপ করে, যার মধ্যে ইইউ থেকে আসা অধিকাংশ পণ্যে ২০ শতাংশ কর বসানো হয়। পরে সেই শুল্ক আগামী ৮ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করা হলেও ১০ শতাংশের একটি ভিত্তিগত কর বহাল রাখা হয়।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যে বাড়তি শুল্ক অনেকটা কমিয়েছে, যদিও তা এখন পর্যন্ত অনেক বেশি। কিন্তু ইউরোপের ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামে ২৫ শতাংশ কর বহাল রাখা হয়। জবাবে ইইউও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেয়—২০ বিলিয়ন বা ২ হাজার কোটি ডলারের মার্কিন পণ্যে ২৫ শতাংশ কর বসানোর হুমকি দিলেও আপাতত তা স্থগিত রাখা হয়েছে। এখন আরও ৯৫ বিলিয়ন বা ৯ হাজার ৫০০ কোটি ডলার মূল্যের মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করছে ইইউ।

ট্রাম্পের মূল অভিযোগ, ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রে বেশি পণ্য রপ্তানি করে, কিন্তু সেখান থেকে আমদানি করে কম। এতে বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হচ্ছে। তাঁর ভাষ্যে, এই বাণিজ্যঘাটতি মার্কিন কোম্পানির জন্য ‘অন্যায্য’।

এদিকে আইফোন নির্মাণকারী কোম্পানি অ্যাপলকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি না হলে আইফোনের ওপর অন্তত ২৫ শতাংশ করারোপ করা হবে। পরবর্তীকালে তিনি আরও বলেন, যেকোনো স্মার্টফোনেই সেই শুল্ক কার্যকর হতে পারে।

এদিকে সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শুক্রবারে ইউরোপের বাজার হোঁচট খেয়েছে। ট্রাম্পের নতুন হুমকির পর যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ কমে যায়। জার্মানির ড্যাক্স ও ফ্রান্সের কাক ৪০ সূচকেরও ১ দশমিক ৫ শতাংশের বেশি পতন হয়েছে।

dsjourneybd.com

dsjourneybd.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *