দেশের সংস্কৃতি ও বিনোদন অঙ্গনের প্রধান ও আকর্ষণীয় আয়োজন ‘মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার ২০২৪’-এর আয়োজন চলছে এখন রাজধানীর বাংলাদেশ চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নবীন, প্রবীণ ও খ্যাতিমান সব তারকার পাশাপাশি আমন্ত্রিত অতিথিরা। জমকালো এই অনুষ্ঠানের প্রথম দিকে আজীবন সম্মাননা দেওয়ার ঘোষণা দেন উপস্থাপক আফজাল হোসেন। বড় পর্দায় দেখানো হয় আবুল হায়াতের জীবন ও কর্ম নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র।
সম্মাননার জন্য নাম ঘোষণার পর আবুল হায়াত মঞ্চে আসেন। এ সময় মিলনায়তনভর্তি দর্শক স্বতঃস্ফূর্তভাবে দাঁড়িয়ে তাঁকে শ্রদ্ধা জানান। আজীবন সম্মাননা হিসেবে তিনি পান উত্তরীয়, ক্রেস্ট ও চেক।
তাঁর হাতে সম্মাননার ক্রেস্ট তুলে দেন আরেক অভিনেত্রী দিলারা জামান। এ সময় মঞ্চে ছিলেন স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী ও প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হক।
নিজের অনুভূতি জানিয়ে আবুল হায়াত বলেন, ‘ধন্যবাদ প্রথম আলো ও মেরিলকে। ধন্যবাদ প্রিয় অনুজ মতি (প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান) ও অঞ্জন চৌধুরীকে (স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক)। ধন্যবাদ মেরিল-প্রথম আলো পরিবারকে। আমি তোমাদেরই লোক।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাই দর্শকদের। এই পুরস্কার আমার একার নয় বরং সেই সব চরিত্রদের, যারা আমার কাছে সত্যি হয়ে উঠেছে। কারণ আমি যখন মেকাপ ছেড়ে বাসায় এসেছি সেসব চরিত্ররাও আমার সঙ্গে এসেছে।’
এ ছাড়াও তিনি তাঁর নাট্যকার, পরিচালক, প্রযোজক ও সাংবাদিকদের ধন্যবাদ জানান। তিনি স্ত্রী শিরীন হায়াতকে ধন্যবাদ জানান। বলেন, ‘শিরি, এই পুরস্কার তোমার
আবুল হায়াতের জন্ম ৭ সেপ্টেম্বর ১৯৪৪ সালে, ব্রিটিশ ভারতের মুর্শিদাবাদে। বাবা চাকরি করতেন রেলওয়েতে। বাবার চাকরির কারণেই মাত্র তিন বছর বয়সে চট্টগ্রামে আসেন আবুল হায়াত। শহরের রেলওয়ে কলোনিতেই কেটেছে তাঁর শৈশব। এখানেই কেটেছে তাঁর ২২ বছর। ১৯৬২ সালে ভর্তি হন ইস্ট পাকিস্তান ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে (বর্তমানে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট)। স্বপ্ন প্রকৌশলী হবেন। সেটা হয়েওছিলেন, কিন্তু জীবন তাঁর জন্য লিখে রেখেছিল অন্য এক গল্প। তবে সেই গল্পের দৃঢ় ভিত তৈরি হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সময়েই।
মঞ্চে তাঁর প্রথম নাটক সেও ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময়ই, ‘এক মুঠো আকাশ’ মঞ্চস্থ হয় ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে। ১৯৬৮ সালে নাগরিকের ‘ইডিপাস’ নাটক দিয়ে টেলিভিশনের অভিষেক হয় আবুল হায়াতের। পড়া শেষে ১৯৬৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ওয়াসায় যোগ দেন আবুল হায়াত। আর্থিক উন্নতির আশায় ১৯৭৮ সালের ৩০ নভেম্বর লিবিয়া যান তিনি। তখন বিদেশে ইঞ্জিনিয়ারদের খুব কদর ছিল।
তিন বছর পর ফিরে এসে সরকারি চাকরিতে ইস্তফা দেন। বেসরকারি চাকরি করেন, কিছুদিন করেন কনসালট্যান্সি। ১৯৯৫ সালে চাকরি ছেড়ে পূর্ণকালীন অভিনেতা হয়ে যান। তাঁকে বিটিভির স্বর্ণযুগের অন্যতম নায়ক বললেও ভুল হয় না। ‘অয়োময়’, ‘বহুব্রীহি’, ‘সৈকতে সারস’, নক্ষত্রের রাত’, ‘আজ রবিবার’, ‘ডাকঘর’, ‘আগন্তুক’, ‘শেষ রক্ষা’, ‘মুক্তধারা’, ‘মুহূর্ত’, ‘খেলা’, ‘শিকার’, ‘দ্বিতীয় জন্ম’, ‘মিসির আলি’ ইত্যাদি নাটকের সুবাদে তখন আবুল হায়াত দেশজুড়ে দর্শকের কাছে পরিচিতি পান। এই নব্বই দশকেই তাঁকে দেখা যায় ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘অবুঝ দুটি মন’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’সহ আলোচিত সব সিনেমায়।
১৯৭০ সালে মাহফুজা খাতুনকে (শিরী) বিয়ে করেন আবুল হায়াত। ৫৫ বছরের দাম্পত্য জীবন তাঁদের। চাকরি আর অভিনয় নিয়ে প্রচণ্ড ব্যস্ততা, আবুল হায়াত সংসারে তেমন মন দিতে পারেননি। সংসার সামলে দুই মেয়েকে ভালোভাবে মানুষ করা, অসুস্থতায় মানসিক শক্তি জোগানো—সবকিছুর কৃতিত্ব স্ত্রীকেই দেন তিনি।
আবুল হায়াতের বয়স এখন ৮০। এখনো তিনি চনমনে, নিয়মিত কাজ করেন। মাসের ১৫ থেকে ১৬ দিন শুটিং থাকে তাঁর। কাজের মধ্যেই খুঁজে নেন বেঁচে থাকার আনন্দ।