দেশে কর আদায়ের হার বাড়াতে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) থাকা সত্ত্বেও যারা আয়কর রিটার্ন জমা দেননি কিংবা রিটার্ন জমা দিলেও কর পরিশোধ করছেন না, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। গতকাল সোমবার রাজধানীর রাজস্ব ভবনে আয়োজিত রাজস্ব পর্যালোচনা সভায় আয়কর কর্মকর্তাদের উদ্দেশে এই নির্দেশনা দেন তিনি।
সভায় এনবিআর চেয়ারম্যান জানান, দেশে বর্তমানে প্রায় ৭২ লাখ টিআইএনধারী করদাতা আয়কর রিটার্ন জমা দেন না। পাশাপাশি আরো ৩০ লাখ করদাতা রিটার্ন জমা দিলেও প্রকৃত কর পরিশোধ করেন না। এ অবস্থায় আয়কর আদায় বাড়াতে এসব এক কোটি করদাতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাদের আর্থিক সক্ষমতা অনুযায়ী কর আদায়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি বলেন, ‘২০২৫-২৬ অর্থবছরে এই এক কোটি করদাতার কাছ থেকে রাজস্ব আদায়ে সর্বোচ্চ মনোযোগ দিতে হবে।’
রাজস্ব পর্যালোচনা সভায় ঢাকার বিভিন্ন কর অঞ্চলের সদস্য, মহাপরিচালক, কমিশনার এবং প্রথম ও দ্বিতীয় সচিবরা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার বাইরের কর্মকর্তারা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
সভায় অঞ্চলভিত্তিক রাজস্ব আদায়ের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে এনবিআর চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট কমিশনারদের বকেয়া রাজস্ব দ্রুত আদায়ের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি কর আদায়ে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তা জানাতে বলেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনাও দেন।
আয়কর নথিপত্র দ্রুত নির্ধারিত কর অঞ্চলে স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘জুলাই মাসের মধ্যেই সব নথি স্থানান্তর করতে হবে, যাতে করদাতারা হয়রানি ছাড়া সেবা পান।’
তিনি আরো বলেন, কর ফাঁকি রোধে নিরীক্ষা নির্বাচন প্রক্রিয়া হতে হবে সম্পূর্ণ ডিজিটাল এবং স্বচ্ছ। ‘নিরীক্ষার লক্ষ্য কর আদায় নয়, বরং কর সংস্কৃতি গড়ে তোলা।’
এছাড়া রিটার্ন না দেওয়া টিআইএনধারীদের চিহ্নিত করে রিটার্ন দাখিলে উৎসাহিত করতে জনবলের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে বলেন তিনি।
সভায় তিনি আয়কর বিভাগের দুর্বলতা তুলে ধরে বলেন, ‘আয় ও সম্পদের বৈষম্য কমানো, ন্যায্য সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহে আয়কর আদায়ের বিকল্প নেই। অথচ আয়কর বিভাগ বারবার এই লক্ষ্যে ব্যর্থ হচ্ছে।’
তিনি আরো জানান, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে এনবিআরের মোট রাজস্ব আদায়ের তুলনায় আয়কর সংগ্রহের হার কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থায় নতুন করদাতা শনাক্ত করতে জরিপ এবং সরেজমিন মূল্যায়ন কার্যক্রম আরো জোরদার করার ওপর জোর দেন তিনি।
সভায় সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি)-এর মহাপরিচালক, আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের কমিশনারসহ অন্যান্য কর্মকর্তারাও অংশ নেন।